Leadership Image 1
ব্যারিস্টার, রাজনীতিবিদ

জমির উদ্দিন সরকার

  • পঞ্চগড় ১-এর শিক্ষাখাতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা (মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়কৃত) রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ
  • দেশে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় চালু
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
  • উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন
  • খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) তৈরি
  • জাতীয় সংসদ ভবনকে পার্লামেন্ট সেশনের উপযুক্ত করে তোলা
  • জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ

বিস্তারিত

পঞ্চগড়ের কৃতি সন্তান জমির উদ্দিন সরকার একাধারে একজন প্রথিতযশা আইনজীবী, প্রথম সারির প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং সদাসর্বদা বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় এক অকুতোভয় সৈনিক।

পাঁচ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য তিনি। দুই দফায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার হিসেবে এবং দুইবার বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভায় গণপূর্ত ও নগর উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বর্তমান সংসদ ভবনের অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। ঢাকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তাঁর হাতেই তৈরি।

আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভায় তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পঞ্চম জাতীয় সংসদে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম মন্ত্রীসভায় তিনি প্রথমে ভূমিপ্রতিমন্ত্রী ও পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে তাঁর হাত ধরে। তাঁর অনুমতিক্রমে বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যাত্রা শুরু হয়। আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা সম্প্রসারণে তাঁর অবদান বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়। শুধু পঞ্চগড় ১ আসনের শিক্ষাখাতেই তিনি ৳২,০৫,৫৬,১২,৭২০ মূল্যমানের কাজ করেন, যার বর্তমান অর্থমান ৳১৪,৮০,০৪,১১,৫৮৪।

এছাড়া, সে সময় তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে গঠিত স্বল্পকালীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রীসভায় তিনি ১৯ মার্চ ১৯৯৬ থেকে ৩০ মার্চ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

জমির উদ্দিন সরকারের জন্ম ১৯৩১ সালে, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের তেঁতুলিয়ার নয়াবাড়ি গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও এলএলবি এবং লন্ডনের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্ট থেকে সনদ নিয়ে ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগদান করেন।

১৯৪৫ সালে ছাত্র থাকা অবস্থায় তৎকালীন ছাত্র ফেডারেশনের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তিনি আওয়ামী মুসলিমের লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও মাওলানা ভাসানীর সহচর।

১৯৭১ সালে হাইকোর্টে আইনজীবীদের যে গ্রুপটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন, জমির উদ্দিন সরকার তাদের অন্যতম। আইন পেশায় সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তাকে পাঁচবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান। দল গঠনের প্রথম পর্যায়ে জিয়াউর রহমান জাগদল গঠন করলে তিনি তাতে যোগ দেন। পরে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য হন।

আইন ও রাজনীতি—উভয় জগতেই তাঁর ছিল গভীর পাণ্ডিত্য ও স্বচ্ছন্দ বিচরণ, যা দিয়ে তিনি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অবিস্মরণীয় ছাপ রেখেছেন। শিল্প ও বাণিজ্য আইন, সমুদ্র আইন, পরিবেশ আইন এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রণয়নের মতো জটিল ও বিশেষায়িত ক্ষেত্রগুলোতে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম পথিকৃৎ।

তাঁরই দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সামুদ্রিক সীমানা নির্ধারণ, বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো গতি পায়। আন্তর্জাতিক ফোরামে তিনি ছিলেন উপকূলীয় দেশগুলোর অধিকারের এক বলিষ্ঠ প্রবক্তা, যা বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের স্বার্থকে সুরক্ষিত করেছিল। দেশের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ এবং নিরলস প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।